পুড়ছে হলিউড, জানা গেল এই দাবানল এত বিধ্বংসী হওয়ার আসল কারণ

পুড়ছে হলিউড, জানা গেল এই দাবানল এত বিধ্বংসী হওয়ার আসল কারণ


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে এক বিশেষ কারণে এত  বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে এবারের দাবানল আর সেই সঙ্গে পুড়ে ছাই হচ্ছে হলিউড।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলস শহরে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দাবানল আসলে এক বিশেষ ধরনের বায়ু প্রবাহ সান্টা অ্যানা উইন্ডের কারণেই এত বিধ্বংসী ও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষকরা অনেকেই এই কথা বলছেন। লু হাওয়ার মতো এই বাতাস ঝড়ের সমানই শক্তিশালী। ঘণ্টায় ১১২ কিলোমিটার বা ৭০ মাইলের মতো এলাকায় তীব্র গতিতে ছড়িয়েছে এটি।

সান্টা অ্যানা উইন্ড শুষ্ক, উষ্ণ ও শক্তিশালী প্রকৃতির। এটি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমি অঞ্চল থেকে উপকূলের দিকে বয়ে যায়। এই বাতাস গাছপালা শুকিয়ে ফেলে এবং আর্দ্রতার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে নিচে নামিয়ে আনে।

ফলে শুষ্ক গাছপালা অতি সহজেই দাহ্য হয়ে ওঠে। শুকনো গাছ আগুনকে আকর্ষণ করে দ্রুত। গাছে গাছে ঘর্ষণ, এমনকি একটি ছোট্ট স্ফুলিঙ্গও বড় দাবানলের কারণ হতে পারে।

সান্টা অ্যানার প্রভাবে সৃষ্ট এই আগুন সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকায় ধ্বংসের কবলে পড়ে পুড়ে ছাই হয়েছে এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, চরম বিপদের সম্মুখীন হয়েছে সাধারণ মানুষ। দাবানলের তীব্রতা এবং ক্ষতির পরিমাণ, দুটোই  ২০০৮ সালের আলোচিত ও স্মরণীয় সায়রে দাবানলকেও পিছনে ফেলেছে।

সবচেয়ে বেশি পুড়ে ছাই হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের প্লাশ প্যাসিফিক প্যালিসেডস, পাসাডেনা এবং আলটাডেনা এলাকাগুলো। এখানে অনেক হলিউড তারকার বসবাস। থাকেন প্যারিস হিলটন ও ম্যান্ডি মুর। বলা যায় বিধ্বংসী আগুনে পুড়ছে হলিউড।
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দমকল কর্মীরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে আগুন নেভাতে ব্যর্থ হওয়ায়, আগুন নেভানো হচ্ছে বিমান থেকে পানি নিক্ষেপ করে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দলে দলে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ স্থলে। এখন পর্যন্ত পাঁচজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এই দাবানল একদিনে সৃষ্টি হয়েছে এমন একেবারেই নয়। এ ঘটনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘকালীন বিভিন্ন কারন। মূলত ক্যালিফোর্নিয়া দীর্ঘদিন ধরে খরার কবলে রয়েছে, যা এই এলাকার মাটি ও গাছগুলোকে  আরও শুকিয়ে ফেলেছে। এছাড়াও ওয়াইল্ডল্যান্ড- আরবান ইন্টারফেস বা বনভূমি ও বসতবাড়ির সংযোগস্থলে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি দাবানলের বিস্তার আরও জটিল করে তুলছে।


উদ্ধারকাজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে দমকল বাহিনী। তবে আগুনের প্রকোপ বেশি হওয়ায় তাতেও ঘটছে ব্যাঘাত। এ কারণে স্থানীয় ও আশেপাশের এলাকার মানুষকে প্রয়োজনে  নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত এই সান্টা অ্যানা উইন্ড এই এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দাবানলটি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরো ভয়ানক আকার ধারণ করেছে বলে দাবি তাঁদের। ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল শুধু হলিউডের ভয়ানক দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ার ইঙ্গিতই দেয় না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গোটা পৃথিবীর ওপর আসন্ন দুর্যোগের একটি আলামত এটি।

Categories: