বিমানের রোম ফ্লাইটে বোমা আতঙ্ক, শাহজালালে সতর্কতা জারি
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রোম ফ্লাইটে বোমা রয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় ওই সতর্কতা জারি করা হয়।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ইতালির রোমে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ওই এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৫৬ নম্বর ফ্লাইটটি আজ বুধবার সকাল নয়টা ২০ মিনিটে রোম থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় ফ্লাইটে ২৫০ যাত্রী ও ১৩ জন ক্রু ছিল। কিন্তু ফ্লাইট অবতরণের আগে বিমান থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, ওই বিমানের কেউ বা কোনো যাত্রী বোমা বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছেন। পরে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ফ্লাইটটি অবতরণের পর বিমানটিকে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ফ্লাইটটি অবতরণের পর সব যাত্রী এবং ক্রুকে নিরাপদে বের করা হয়েছে। যাত্রীদের টার্মিনালে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এখনো বোমার উপস্থিত পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আপডেট জানানো হবে।
পদে পদে বাধার মুখে প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘মার্চ ফর টেনথ গ্রেড’
দশম গ্রেডে বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকায় ‘মার্চ ফর টেনথ গ্রেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি পালন করবেন তারা। তবে কর্মসূচি ঠেকাতে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগ্রহী প্রাথমিকের শিক্ষকরা।
তারা বলছেন, শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। তবে সব বাধা অতিক্রম করে তারা ‘মার্চ ফর টেনথ গ্রেড’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তারা প্রধান উপদেষ্টা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ম মেনে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে দৃশ্যমান কোনো সাড়া মেলেনি।
দাবি আদায়ে তারা সম্প্রতি ‘মার্চ ফর টেনথ গ্রেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সেখান সব কর্মকর্তাদের তাদের অধীন জেলা ও উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠাতে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে অনেক জেলা ও উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা চিঠিও ইস্যু করেছেন। তার মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা এবং চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনার চিঠি জাগো নিউজের হাতে এসেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ফের উত্তেজনা
Hearing on review petition to restore caretaker government system on February 9
The Appellate Division has fixed February 9 for hearing three separate petitions seeking review of the judgment to abolish the caretaker government. The Appellate Division headed by Justice Md. Ashfaqul Islam fixed this date on Sunday (December 19).
Earlier, on April 6, 2011, after hearing the appeal, the Appellate Division kept the matter pending for verdict (CAV). On May 10 of the same year, the Appellate Division of the Supreme Court declared the Thirteenth Amendment to the Constitution (caretaker government) invalid and annulled it. However, after that verdict, the court opined that the 10th and 11th National Parliament elections can be held under the caretaker government. In this case, the court also said that any decision can be taken in the election of the chief advisor to the caretaker government on the basis of consensus in the parliament. The full bench of the Appellate Division headed by the then Chief Justice ABM Khairul Haque gave the verdict.
The court further said in its verdict, "The petition has been accepted based on the majority opinion of the Appellate Division. Through this, the Constitution (Thirteenth Amendment) Act, 1996 has been declared illegal and unconstitutional since its inception. However, even if it is not legal (legal due to necessity and the security of the people is the supreme law, the security of the state is the supreme law...based on the principles that have been in place for a long time), the cancellation of the 10th and 11th National Parliament elections can be covered under the Thirteenth Amendment. During this period, the Parliament will also have full freedom to cancel the provision to appoint one of the former Chief Justices of Bangladesh or one of the judges of the Appellate Division as the head of the non-partisan caretaker government. At the same time, the court said that the leave to appeal filed in this regard in 2005 has also been dismissed."
In an immediate reaction after the verdict was announced, Abdul Mannan Khan, one of the petitioners in the case, said, "As a result of this order of the Appellate Division, the foundation of the country's democracy will be stronger and the judiciary will be more free from influence."
The appellant's lawyer MI Farooqui said, "As a result of this verdict in the Appellate Division, we have been able to protect the constitution. This has been very good for the constitution, democracy and the nation. The caretaker government system is another form of military rule. Just as some sections of the constitution were abrogated and made ineffective during the military rule period, the same is done during the caretaker government period."
Eminent lawyer and amicus curiae in the case Dr. M Zahir said, "It is a good verdict. I have been saying for a long time to keep the judges away from the caretaker government process. My words are largely reflected in this verdict. According to this verdict, the 10th and 11th elections will be held under the caretaker government. But the judgment observed that Parliament can bring amendments to avoid involving judges.
Meanwhile, on August 25, 2024, five people including Citizens for Good Governance (SUJON) Editor Badiul Alam Majumdar filed a review petition against the verdict declaring the Thirteenth Amendment to the Constitution to abolish the caretaker government system illegal. The rest are Tofail Ahmed, M Hafiz Uddin Khan, Jobairul Haque Bhuiyan and Zahra Rahman. Advocate Sharif Bhuiyan and Barrister Tanim Hossain Shaon filed a review petition on their behalf. Then, on October 16, Supreme Court lawyer Zainul Abedin filed another review petition on behalf of BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir.
On October 20, a chamber judge court headed by Justice Md. Rezaul Haque set a hearing date of October 24 for the two review petitions before the full bench of the Appellate Division. On October 23, Bangladesh Jamaat-e-Islami filed a review petition against the verdict to annul the Thirteenth Amendment to the Constitution, which abolished the caretaker government system. Jamaat Secretary General Mia Golam Parwar filed the review petition in the Appellate Division, said the party's lawyer Mohammad Shishir Monir.
Incidentally, the Thirteenth Amendment to the Constitution, which included the caretaker government system, was adopted by the National Parliament in 1996. Three lawyers, including Advocate M Salim Ullah, filed a writ petition in the High Court challenging the validity of this amendment. On August 4 of that year, the High Court Division dismissed the writ petition and declared the caretaker government system valid. The writ petitioners then appealed against this verdict in 2005. The court appointed eight amicus curiae (friends of the court) in the case and heard their views. Five of them directly expressed their views in favor of the caretaker government system. They are – Dr. Kamal Hossain, TH Khan, former Attorney General Mahmudul Islam, Barrister M Amir-ul Islam and Barrister Rokonuddin Mahmud. The other amicus curiae, Barrister Ajmalul Hossain KC, expressed his opinion in favor of abolishing the caretaker government system. Barrister Rafiq-ul-Haq and Dr. M Zahir presented their proposal to the court, arguing for radical reforms of the caretaker government system. In addition, the then Attorney General Mahbubey Alam argued for maintaining the caretaker government.
আদিবাসী শব্দ নিয়ে বিরোধ
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সামনে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ
একসময়কার ঝড় তুলা মডেল ও অভিনেত্রী, এখন সন্ন্যাসী!
‘ডেটা সায়েন্স’ কি সত্যিই সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন বিষয়
ডেটা সায়েন্সের প্রধান উপাদান হল, ডেটা সংগ্রহ, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, পরিসংখ্যান, মেশিন লার্নিং, এবং ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন। একজন ডেটা সায়েন্টিস্টের এই কৌশলগুলোর ওপর গভীর জ্ঞান থাকতে হয়। একই সঙ্গে প্রোগ্রামিং ভাষা (যেমন পাইথন), ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (যেমন এসকিউএল) দক্ষতা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মক্ষেত্রে পদ-পদবী
১. ডেটা সায়েন্টিস্ট: ডেটা সায়েন্টিস্টরা বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করেন, অপ্রয়োজনীয় ডেটা বাদ দেন এবং ডেটা বিশ্লেষণ করেন। তারা ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, মেশিন লার্নিং মডেল তৈরি এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
২. মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার: মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়াররা জটিল অ্যালগরিদম ডিজাইন, বাস্তবায়ন এবং উন্নত করেন যা কম্পিউটারকে ডেটা থেকে শিখতে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে।
৩. ডেটা অ্যানালিস্ট: ডেটা অ্যানালিস্টরা ডেটা সংগ্রহ করেন, অপ্রয়োজনীয় ডেটা বাদ দেন এবং প্রাথমিক বিশ্লেষণ করেন। তারা ট্রেন্ড চিহ্নিত করেন এবং রিপোর্ট তৈরি করেন।
৪. ডেটা আর্কিটেক্ট: ডেটা আর্কিটেক্টরা ডেটা স্টোরেজ এবং সিস্টেম ডিজাইন করেন যা ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং ব্যবহারের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো প্রদান করে।
৫. ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন স্পেশালিস্ট: ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন স্পেশালিস্টরা জটিল ডেটা থেকে আকর্ষণীয় গ্রাফ, চার্ট এবং মানচিত্র তৈরির মাধ্যমে সহজবোধ্য করে তোলেন।
ডেটা সায়েন্স শেখার জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, ওয়ার্কশপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম রয়েছে। বাংলাদেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেটা সায়েন্স পড়ানো হয়।
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ফলিত পরিসংখ্যান এবং ডেটা সায়েন্স
২. বুয়েট: ডেটা সায়েন্সে স্নাতকোত্তর
৩. ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি: স্কুল অব ডেটা অ্যান্ড সায়েন্স
৪. গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ডেটা সায়েন্স
৫. নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি: ডেটাবেজ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্
৬. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৭. ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি: ডেটা সায়েন্স
8. স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এসইউবি): ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং
ডেটা সায়েন্স একটি বহুমাত্রিক ক্ষেত্র, যা তথ্যের বিশ্লেষণ, মডেল তৈরি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় কাজ করে। এটি পরিসংখ্যান, গণিত, প্রোগ্রামিং, এবং ব্যবসায়িক পরিস্থিতির সমন্বয় ঘটায়। ডেটা সায়েন্টিস্টরা তথ্যের বিশাল পুল থেকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনেন যা ব্যবসায়িক ফলাফল এবং নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪, আরও ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা
বায়ুদূষণ রোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আইনের প্রয়োগ জরুরি
শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এই সময়ে বিশ্বের অন্যতম দূষিত এলাকার তালিকায় উঠে আসে বাংলাদেশ। বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেছেন, কার্যকর সমাধানের অভাব, সমন্বয়হীনতা এবং আইন বাস্তবায়নে দুর্বলতা বায়ুদূষণ সংকট মোকাবিলায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণ রোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আইনের প্রয়োগ জরুরি।
জাগো নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক রায়হান আহমেদ। আজ থাকছে সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব।
আহমদ কামরুজ্জামান: বাংলাদেশের গত ১০ বছরের বায়ুর মানের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই যে শীতকাল এলেই বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাসে ৬০ ভাগের বেশি বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। এই শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাত খুবই কম থাকে। অন্যদিকে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত দূষণের পরিমাণ কম থাকে। এ সময় বৃষ্টি হয়, তখন বৃষ্টির ওয়াশিং ইফেক্ট থাকে। তাই বায়ুদূষণ কম অনুভূত হয়। অনুভূত শব্দটা ব্যবহার করেছি, কারণ দেশে সারা বছরই বায়ুদূষণের সবগুলো উৎস সক্রিয় থাকে। ঢাকায় বায়ুদূষণের প্রধান উৎস ছয়টি। এই উৎসগুলো হলো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বর্জ্য পোড়ানো, ইটের ভাটা ও শিল্পকারখানা, আন্তদেশীয় বায়ুদূষণ এবং গৃহস্থালিত রান্নার চুলা থেকে দূষণ। কিন্তু জুন-জুলাই মাসে এই উৎস থেকে সৃষ্টি হওয়া দূষিত বাতাস বৃষ্টির মাধ্যমে নিচে পতিত হয়। ওয়াশিং ইফেক্ট হয়।
শীতকালে যখন কুয়াশা পড়ে, তখন এই কুয়াশার সঙ্গে কেমিক্যাল ও ধুলাবালি মিলে এক ধরনের কেমিক্যাল কম্পোজিশন তৈরি করে, যাকে আমরা স্মোক (ধোঁয়া) বলে থাকি। এই স্মোক তৈরি হলে তখন এটা গাঢ় কুয়াশার মতো দেখা যায়। এগুলো দেখতে কুয়াশার মতো মনে হলেও এটা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
চলতি শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার সঙ্গে একাধিক মাঝারি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। কুয়াশা ও দূষণের সম্পর্ক কী? জানুয়ারিতে কি বরাবরের মতো দূষণ বেশি থাকবে?
আহমদ কামরুজ্জামান: আমাদের শহর অঞ্চলের দূষণের মধ্যে ব্ল্যাক কার্বন, ধুলাবালি ও কেমিক্যাল বেশি। শীতকালে যখন কুয়াশা পড়ে, তখন এই কুয়াশার সঙ্গে কেমিক্যাল ও ধুলাবালি মিলে এক ধরনের কেমিক্যাল কম্পোজিশন তৈরি করে, যাকে আমরা স্মোক (ধোঁয়া) বলে থাকি। এই স্মোক তৈরি হলে তখন এটা গাঢ় কুয়াশার মতো দেখা যায়। এগুলো দেখতে কুয়াশার মতো মনে হলেও এটা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই ধরনের অবস্থা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে পরিলক্ষিত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ডিসেম্বরে কুয়াশা আর ধোঁয়া মিলে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যার ফলে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। সেই অনুযায়ী জানুয়ারিতেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে।
শিল্পাঞ্চল, ইটভাটা ও যানবাহন থেকে নির্গত দূষণ কতটা দায়ী বলে আপনি মনে করেন?
আহমেদ কামরুজ্জামান: বাংলাদেশে আজ থেকে ১০ থেকে ১৫ বছর আগে শিল্পকারখানা এবং ইটের ভাটা থেকে প্রায় ৫৮ ভাগ দূষণ হতো। ইটের ভাটা ও শিল্পকারখানা থেকে যে দূষণ হতো, পরিমাণগত দিক থেকে তা কমেনি। তবে বায়ুদূষণের অন্যান্য উৎসের সঙ্গে যদি তুলনা করি রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, বর্জ্য পোড়ানোসহ যেসব কারণ রয়েছে, এগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বায়ুদূষণে ইটের ভাটার যে কন্ট্রিবিউশন ছিল সেটি আগের তুলনায় কমেছে।
সরকারি কাজে পোড়ানো ইটের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। তাহলে ইটভাটা থেকে দূষণ কমে আসবে। আমাদের যে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহারের কথা ছিল, সেটিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আহমেদ কামরুজ্জামান: সরকার বায়ুদূষণ রোধে যে নির্দেশিকা তৈরি করেছে সেখানে সরকারি কাজে পোড়ানো ইটের ব্যবহার ২০২৫ সালের মধ্যে শূন্যের ঘরে নিয়ে আসার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে এর সফলতা আমরা দেখতে পাইনি। আপনি দেখবেন, উৎপাদিত পোড়ানো ইটের প্রায় ৫০ ভাগ সরকারি কাজে ব্যবহার হয়। তাই সরকারি কাজে পোড়ানো ইটের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। তাহলে ইটভাটা থেকে দূষণ কমে আসবে। আমাদের যে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহারের কথা ছিল, সেটিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আহমেদ কামরুজ্জামান: শহর ও গ্রামে বায়ুদূষণের পার্থক্য রয়েছে। শহরে দূষণের প্রায় সবগুলো উৎস সক্রিয় থাকে। বিশেষ করে নির্মাণ কাজ ও শিল্পকারখানা। সে অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে এই উৎসগুলো কম হয়। গ্রামে দূষণ কম হওয়ার কারণ দুটি। একটি হলো গ্রামে গাছপালা ও জলাধারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এছাড়া খোলা জায়গা থাকে অনেক। আরেকটি হলো গ্রামে শিল্পকারখানা ও নির্মাণ কাজ অনেক কম থাকে। সে কারণে গ্রামের অবস্থা তুলনামূলক ভালো রয়েছে।
যেমনটি বললেন, শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণ কাজ বেশি হয়। অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হয়। ফলে শহরে প্রচুর ধুলাবালি উড়ে। ধুলা বায়ুদূষণে কেমন প্রভাব ফেলে?
আহমেদ কামরুজ্জামান: যদি স্বাস্থ্যগত প্রভাব চিন্তা করি মাটি থেকে যে ধুলা তৈরি হয়, সেটি রাসায়নিক দূষণ। কার্বন ডাই অক্সাইড, ব্ল্যাক কার্বনের চেয়ে মাটির ধুলা কম স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত এই ধরনের ধুলা নিশ্বাসের সঙ্গে নেই। এই ধুলার সঙ্গে যখন কেমিক্যাল যুক্ত হয়, তখন ওই ধুলা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। কোনো দূষণকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। প্রতিটি দূষণ রোধে সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করছে?
আহমেদ কামরুজ্জামান: বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা একদিনের কাজ নয়। একক কোনো প্রতিষ্ঠান এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এখানে সবার সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। পরিবেশ অধিদপ্তর হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে নির্দেশিকা তৈরি করেছে, সেখানে ২১টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বিভিন্নভাবে দূষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ রয়েছে। দূষণের সঙ্গে জড়িত এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি এই সংস্থাগুলোকে যুক্ত করা হয়েছে। যেমন: সড়ক ও জনপথের যারা দূষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা যেন যানবাহন থেকে যে ধোঁয়া হয়, সেটা নিয়ন্ত্রণ করে। একইভাবে আবার শিল্প কারখানা ও ইটের ভাটায় যে দূষণ হচ্ছে, সেটাকে শিল্প মন্ত্রণালয় তদারকি করবে। পরিবেশ অধিদপ্তর আইন প্রয়োগ করবে, সমন্বয় করবে। কারণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সহজে দূষণ রোধে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারবে।
সমন্বয়ের অভাবে শুধু বায়ুদূষণ নয়, এর অভাবে অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। আমি মনে করি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে এই সমন্বয়হীনতা বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দূষণের সঙ্গে যুক্ত। আপনিও তেমনটি বললেন। বিগত বছরগুলো ধরে দেখে আসছি এদের মধ্যে সমন্বয় নেই। কেন এমন হচ্ছে?
আহমেদ কামরুজ্জামান: সমন্বয়ের অভাবে শুধু বায়ুদূষণ নয়, এর অভাবে অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। আমি মনে করি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে এই সমন্বয়হীনতা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি, একটা সংস্থা রাস্তায় কাজ শেষ করে যাওয়ার পর, সেখানে কার্পেটিং ছাড়া নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকে, মাসাধিককাল। এরপর কার্পেটিং করলেও আরেকটি সংস্থা এসে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। এটি সমন্বয়হীনতার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। যুগ যুগ ধরে এমনটি হয়ে আসছে। তাই আমার পরামর্শ, এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন তার সিটি গভর্ন্যান্সের আওতায় শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পারে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর শক্তিশালী আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এনফোর্স করে। তাহলে সমন্বয় করতে অন্যান্য মন্ত্রণালয় আগ্রহী হবে। একটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার মাধ্যমে অন্য মন্ত্রণালয়ের সফলতা বেড়ে যায়। এর সুফল জনগণ ভোগ করে।
আহমেদ কামরুজ্জামান: আমরাও প্র্যাকটিক্যালি সেই অবস্থা লক্ষ্য করছি। কারণ ব্যক্তি উদ্যোগে যে নির্মাণ কাজ চলছে, সেখানে যেমন নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা হয় না। অন্যদিকে সরকারিভাবে কাজের ক্ষেত্রেও নির্মাণবিধি মেনে কাজ করতে দেখা যায় না। মেট্রো, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে সেখানেও নির্মাণসামগ্রী যত্রতত্র ফেলে রাখে। পরিবেশসম্মতভাবে রাখে না। এখানে আইনের বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা রয়েছে। আমি মনে করি বায়ুদূষণ রোধে আইনের প্রয়োগটা সরকারি ও বেসরকারি দুই পর্যায়ে থাকতে হবে। নির্মাণবিধি মানাটা সবার জন্য জরুরি।
রিও ভাইরাস কীভাবে ছড়াচ্ছে, এর চিকিৎসা কী?
দেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে রিও ভাইরাস। এরই মধ্যে ৫ জনের দেহে রিও ভাইরাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রক্তাক্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তারা আরও জানিয়েছেন, সংক্রমিতদের কারও অবস্থাই গুরুতর ছিল না, সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় রিও ভাইরাসে আক্রান্ত নিশ্চিত হয়। এরপর থেকে মিডিয়ায় রিও ভাইরাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।রিও ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। রিও ভাইরাস রিও-ভাইরিডি গ্রুপের ভাইরাস। এই ভাইরাস গোত্রের মধ্যে পরিচিত একটি ভাইরাস হলো রোটা ভাইরাস। একে আমরা সবাই চিনি। রোটা ভাইরাস শিশুদের ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। রোটা ভাইরাসের মতোই একটি ভাইরাস হলো রিও ভাইরাস। রিও ভাইরাসে সাধারণত শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া বয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারেন।কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস?
রিও ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় তা নিয়ে সঠিক কারণ এখনো সেভাবে জানা যায়নি। তবে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, রিও ভাইরাস আক্রান্ত কোনো শিশুর মল পানি বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্য শিশুর মুখে গেলে এ ভাইরাসের সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়া যেহেতু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সর্দি-কাশি থাকে তাই অনেকে মনে করেন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
সংক্রমিতদের শরীরে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে লক্ষণগুলো হয় তা অন্যান্য ভাইরাসের মতোই অনেকটা। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, অবসাদগ্রস্থতা হতে পারে। একই সঙ্গে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া। শিশুদের জ্বরের সঙ্গে পুরো শরীরে দেখা দিতে পারে ফুঁসকুড়ি। সাধারণত ভাইরাস জ্বরের মতই ৫-৭ দিন পর আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
চিকিৎসা কী?
এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দেন চিকিৎসকরা। রোগীর জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল দিতে হয়। সর্দি-কাশির জন্য মন্টিলুকাস্ট অথবা ফেক্সোফেনাডিন বা রুপাটিডিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়া থাকলে শিশুকে ওরাল স্যালাইন খাওয়াতে হয়। শরীর ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল কাজ করে।
কতটা ভয়াবহ রিও ভাইরাস?
রিও ভাইরাস কিন্তু এতোটাও ভয়াবহ নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। ১৯৫৪ সালে প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্তের পর থেকে এতদিন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন তাদের খুব কমই মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়েছে।
খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তির মস্তিষ্কের প্রদাহ এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এনকেফেলাইটিস বলা হয় ও মস্তিষ্কের পর্দার প্রদাহ যেটাকে মেনিনজাইটিস বলা হয় তা হতে পারে। তবে তা খুবই কম। তারপরও যদি কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে।
২০০ বছর আগেও হানা দিয়েছিল এইচএমপিভি
কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্ব যখন হাঁফ ছেড়ে উঠতে শুরু করেছে, তখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এইচএমপিভি। সম্প্রতি চীনে শিশুদের মধ্যে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) নামে সংক্রমণটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ভারতেও কয়েকজনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। ভাইরাসটি সর্দি-কাশির মতো উপরের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের পাশাপাশি ফুসফুসের গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে। তবে এবারই প্রথম নয়, ২০০ বছর আগেও ভাইরাসটি আক্রমণ চালিয়েছিল। সবশেষ ২০০১ সালেও দেখা দিয়েছিল।অন্য পাঁচটি ফ্লু ভাইরাসের মতেই এইচএমপিভি ভাইরাসের উপসর্গ। প্রায় ২০০ বছর আগে বিজ্ঞানীরা এটি আবিষ্কার করে। ২০০১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ভাইরাসটিকে দেখা যায়। তখন খুব বেশি গবেষণা হয়নি। বিশেষজ্ঞরাও খুব বেশি গুরুত্ব দেননি। তৈরি হয়নি ভ্যাকসিনও। প্রায় ২৪ বছর পর আবারও ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। করোনা পরবর্তী সময়ে যা মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এইচএমপিভি হচ্ছে একটি আরএনএ ভাইরাস। সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস। বিজ্ঞানীদের মতে, সারা বছরই এই ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে। তবে মৌসুম বদলের সময়ে বিশেষ করে শীত ও বসন্তে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর চরিত্র অনেকটা করোনা ভাইরাসের মতো। এই ভাইরাসও হাঁচি-কাশির মাধ্যমেই রোগ ছড়ায়। শ্বাসযন্ত্রেই এটি সবার আগে আক্রমণ করে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসটি প্রাণঘাতীও। করোনার মতো আরএনএ (রাইবো-নিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস হলেও ২০০১ সালে যখন প্রথম আত্মপ্রকাশ হয়েছিল তখনও এইচএমপিভি ততটাও প্রভাব ফেলেনি। সর্দি-কাশি থেকে জ্বর সহ মৃদু থেকে তীব্র উপসর্গ দেখা দিলেও মৃত্যু হয়নি।
উত্তর চীনের বেইজিং ও তদসংলগ্ন এলাকায় হিউম্যান মেটানিউমোনিক ভাইরাস বা এইচএমপিভি নামের একটি ভাইরাস মানবদেহের ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ার খবরে উদ্বিগ্ন এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ভাইরাসটি বাতাসে ছড়ায় এবং আক্রান্তদের মাঝে ঠান্ডা-জ্বর বা ফ্লু-র উপসর্গ দেখা দেয়। ৫ বছর ও এর চেয়ে ছোট শিশুরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে বেশি। প্রবীণ ও ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগীরাও এর ঝুঁকির আওতায় পড়ে। রোগটিতে আক্রান্তদের হাসপাতালে নেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। উচ্চ চাপে অক্সিজেন ও রক্তে স্টেরয়েড অনুপ্রবেশ ছাড়া শ্বাসকষ্ট কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সমস্যা হলো, এই ভাইরাসের কোনো কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। চীনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আক্রান্তদের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়ার বিষয়েও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে আশার কথা হলো, চীন রোগটি এখনো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। হংকং, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন এশীয় গণমাধ্যমে এ মুহূর্তে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটে যায়নি বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এইচএমপিভি বার্ডফ্লু ভাইরাসের সমগোত্রীয়। এটি প্রথম ২০০১ সালে একদল ডাচ বিজ্ঞানী শনাক্ত করেছিলেন। এই ভাইরাসটি কোভিড-১৯-এর মতোই একটি এনভেলপড আরএনএ ভাইরাস। তবে এর গায়ের প্রোটিন কোভিড-১৯-এর স্পাইক প্রোটিন থেকে ভিন্ন। অন্যান্য ভাইরাসের মতো এইচএমপিভি শরীরে প্রবেশ করার পর এর গ্লাইকোপ্রোটিন একে কোষে স্থানান্তর করে। মানবদেহের কোষে আশ্রয় নিয়ে কোষের ক্রিয়াকর্মকে হাইজ্যাক করে ভাইরাস তার বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। এ ভাইরাসটিও কোষের ভেতর তার আরএনএ অর্থাৎ জেনেটিক পদার্থ ছেড়ে দেয়, যা তার এফ-প্রোটিন কপি করে এবং ভাইরাস লোড শরীরে বাড়াতে সক্ষম হয়। কোভিড-১৯-এর মতো এ ভাইরাস শরীরে সাইটোকাইনের ঝড় তোলে না এবং শরীরের নানা অঙ্গকেও আক্রান্ত করে না। এ ভাইরাসের কারণে ফুসফুসের নিচের দিকে ইনফ্লামেটরি রেসপন্স দেখা যায় এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ বাড়তে থাকে।
রোগটিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে পারে ২ বছর ও এর কম বয়সি শিশুরা। ২০১৩ সালে খ্যাতনামা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, বছরে প্রতি ১০০০ শিশুর (৬ মাস ও এর কম বয়সি) মাঝ থেকে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। আবার ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেক সিটিতে সংঘটিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এইচএমপিভি সংক্রমিত ২ বছর ও এর কম বয়সি শিশুদের প্রায় শতকরা ৫০ ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। অন্যদিকে ৬৫ বছর বা এর বেশি বয়েসের রোগীদের মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি এইচএমপিভি থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের এক্ষেত্রে করণীয় কী? জাতীয় পর্যায়ে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যে চীন, জাপান, হংকং ও অন্যান্য দেশে রোগটি কতটা ছড়াচ্ছে। যেহেতু এ ভাইরাসটি শনাক্ত করতে হলে ল্যাবরেটরিতে পিসিআর পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়, তাই দেশব্যাপী সারভিলেন্স এই মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয়। তবে এশিয়ার অন্যান্য দেশের গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে লিয়াজোঁ তৈরি করার এখনই সময়। স্থানীয় হাসপাতালে অক্সিজেনের প্রতুলতা নিশ্চিত করা দরকার।
ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা কী কী করতে পারি? নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি। যেহেতু এইচএমপিভি একটি এনভেলপড ভাইরাস, তাই সাবান ব্যবহার করে এ ভাইরাসটির ইন্টেগ্রিটি নষ্ট করা যায় সহজে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি ঘন ঘন চোখে হাত দেওয়া এবং রোগীর ব্যবহৃত থালা-বাটি ব্যবহার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। ২ বছর ও এর কম বয়সি শিশুদের আক্রান্তদের সঙ্গে মেলামেশা না করতে দেওয়াই সমীচীন। ১ বছরের কম বয়সি শিশুদের বিশেষ যত্নে রাখা দরকার। যেহেতু শিশুরা এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় এবং যেহেতু এই বয়সি রোগীদের ক্ষেত্রে রোগটির ভয়াবহতাও বেশি, তাই তারাই টার্গেট পপুলেশন হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রবীণদের মাস্ক পরে চলাফেরা করা প্রয়োজন। তাদের যারা সেবা প্রদান করেন, তাদেরও মাস্ক পরে থাকা ও নিয়মিত হাত ধোয়া দরকার।
এইচএমপিভি এখনো মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেনি, এটি আশার কথা। তবে যেহেতু শিশু ও প্রবীণদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এবং রোগটির কোনো প্রতিষেধক নেই ও নিরাময়ের জন্য বিশেষ কোনো ওষুধও নেই, তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে ও ব্যক্তি পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখনই কাম্য।
পুড়ছে হলিউড, জানা গেল এই দাবানল এত বিধ্বংসী হওয়ার আসল কারণ
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দমকল কর্মীরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে আগুন নেভাতে ব্যর্থ হওয়ায়, আগুন নেভানো হচ্ছে বিমান থেকে পানি নিক্ষেপ করে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দলে দলে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ স্থলে। এখন পর্যন্ত পাঁচজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত এই সান্টা অ্যানা উইন্ড এই এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দাবানলটি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরো ভয়ানক আকার ধারণ করেছে বলে দাবি তাঁদের। ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল শুধু হলিউডের ভয়ানক দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ার ইঙ্গিতই দেয় না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গোটা পৃথিবীর ওপর আসন্ন দুর্যোগের একটি আলামত এটি।
















