ঘুমের সময় কি আপনার সন্তান দাঁত কিড়মিড় করে? জানুন কারণ ও সমাধান


শিশুর ঘুম সাধারণত শান্ত, মিষ্টি ও নিরিবিলি হয়। তবে অনেক বাবা–মা লক্ষ্য করেন যে তাদের সন্তান ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় বা ঘষাঘষি করছে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় Bruxism। এটি ছোট থেকে বড় যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা দিতে পারে, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাধারণ। যদিও অনেক সময় এটি ক্ষতিকর নয়, তবুও দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে দাঁত, মাড়ি কিংবা সামগ্রিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন শিশুরা ঘুমের সময় দাঁত কিড়মিড় করে এবং এর সমাধান কী হতে পারে।

দাঁত কিড়মিড় করার কারণ

1. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ

পড়াশোনা, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো কিংবা দৈনন্দিন টেনশন—এসব কারণে শিশুদের মধ্যে অজান্তেই দাঁত কিড়মিড় করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

2. দাঁতের অসামঞ্জস্যতা

অনেক সময় শিশুর দাঁত সঠিকভাবে না বসলে বা উপরের–নিচের দাঁত সঠিকভাবে মিল না খেলে ঘুমের মধ্যে দাঁত ঘষাঘষি হয়।

3. অ্যালার্জি বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা

নাক বন্ধ থাকা, অ্যাজমা বা অ্যালার্জির কারণে ঘুমে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হলে দাঁত কিড়মিড় হতে পারে।

4. শরীরের স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, স্নায়ুতন্ত্রের অজান্ত প্রতিক্রিয়ার কারণে এই আচরণ হতে পারে।

5. অভ্যাস বা উত্তরাধিকার

পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে যদি দাঁত কিড়মিড় করার প্রবণতা থাকে, তবে শিশুর মধ্যেও এ অভ্যাস দেখা যেতে পারে।

সম্ভাব্য প্রভাব

* দাঁতের ক্ষয় বা ফাটল

* দাঁতের সংবেদনশীলতা

* মাড়ির সমস্যা

* মাথাব্যথা বা চোয়ালে ব্যথা

* ঘুমের ব্যাঘাত

যদিও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা গুরুতর হয় না, তবে নিয়মিত দাঁত কিড়মিড় করলে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

সমাধান ও করণীয়

1. মানসিক চাপ কমানো

শিশুর পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজে অযথা চাপ না দেওয়া

   * খেলাধুলা ও বিনোদনের সময় নিশ্চিত করা

   * শোবার আগে হালকা গল্প বলা বা গান শোনানো

2. নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ

দাঁতের কোনো অসামঞ্জস্যতা থাকলে দন্তচিকিৎসক দ্রুত সমাধান দিতে পারেন।

3. মাউথগার্ড ব্যবহার

ডাক্তাররা অনেক সময় রাতে ব্যবহারের জন্য বিশেষ মাউথগার্ড দিতে পারেন, যা দাঁতকে ঘষাঘষি থেকে রক্ষা করে।

4. শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ

অ্যালার্জি বা নাক বন্ধ থাকা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

5. ভালো ঘুমের অভ্যাস

   * নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগার অভ্যাস

   * শোবার আগে টিভি, মোবাইল বা ভিডিও গেম কম ব্যবহার

   * হালকা ও স্বাস্থ্যকর রাতের খাবার খাওয়া

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

যদি আপনার সন্তান নিয়মিত দাঁত কিড়মিড় করে এবং এর ফলে দাঁতের ক্ষতি, ব্যথা বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, তবে অবশ্যই একজন দন্তচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সময়মতো চিকিৎসা ও পরামর্শ নিলে সমস্যাটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

শিশুর ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করা অনেক সময় স্বাভাবিক ও অস্থায়ী ব্যাপার হতে পারে। তবে নিয়মিত হলে এটি অবহেলা করার মতো নয়। কারণ খুঁজে বের করা এবং সঠিক সমাধান গ্রহণ করাই হলো এর মূল উপায়। বাবা–মা সচেতন থাকলে শিশুর দাঁত ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।


Categories:

 পাবজি-ফ্রি ফায়ার খেললেই এবার ৫,০০০ টাকা জরিমানা! নতুন আইনে রক্ষা পাবে তরুণ প্রজন্ম?


আজকাল ওয়েবডেস্ক: পথে ঘাটে, কিংবা পাড়ার ক্লাবে, ফোনে মুখ গুঁজে বসে আছে একদল তরুণ। হাতে ধরা মোবাইল নাড়িয়ে চলছে বন্দুক চালানোর খেলা পাবজি কিংবা ফ্রি ফায়ারের মতো অনলাইন গেম। এই দৃশ্য এখন রোজই দেখা যায়। এবার এই অনলাইন গেমের নেশা রুখতে বেনজির দাওয়াই ছত্তীসগঢ়ের একাধিক পঞ্চায়েতের। গেম খেললেই দিতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা।


ছত্তীসগঢ়ের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মোবাইল গেমিং-এর আসক্তি এবং মদের রমরমা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শিশু-কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, সকলেই এই নেশার শিকার। এই প্রবণতা রুখতে এ বার অভিনব এবং কড়া পদক্ষেপ নিল একাধিক পঞ্চায়েত। কবীরধাম জেলার গহিরাভেড়ি পঞ্চায়েত জারি করেছে এক নতুন নিয়ম। সেখানে কোনও শিশুকে জনপ্রিয় অনলাইন ব্যাটেল গেম (যেমন ফ্রি ফায়ার বা পাবজি/বিজিএমআই) খেলতে দেখলে তার অভিভাবকদের ৫,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। গ্রাম পঞ্চায়েতের জারি করা এই নির্দেশের লক্ষ্য, শিশুদের মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে মুক্ত করে পড়াশোনা ও খেলাধুলোর দিকে তাদের মনোযোগ ফেরানো। এই নিয়ম সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে মাসে তিন বার সচেতনতামূলক প্রচারও শুরু হয়েছে। শুধু পঞ্চায়েত সদস্য নয়, এই নিয়ম কার্যকর করতে সাধারণ গ্রামবাসীদেরও শামিল করা হয়েছে। নিয়মভঙ্গের খবর দিলে সংবাদদাতা পাবেন ১,০০০ টাকা পুরস্কার

গ্রামের মোড়ল বেদবাই পোর্তে জানিয়েছেন, “শিশুদের মোবাইলের সর্বনাশা ফাঁস থেকে বাঁচাতেই এই উদ্যোগ। আমরা চাই ওরা পড়াশোনা, খেলাধুলো এবং অন্যান্য সৃষ্টিশীল কাজে মন দিক।”

অন্যদিকে, পার্শ্ববর্তী রাজনন্দগাঁও জেলার মথালডাবরি পঞ্চায়েতে অভিযান শুরু হয়েছে মদের বিরুদ্ধে। গ্রামসভার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্রামে বেআইনিভাবে মদ বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে বিক্রেতাকে ৩১,০০০ টাকা জরিমানা করা হবে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। প্রকাশ্যে মদ্যপানের শাস্তি হিসেবে ১০,০০০ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এই অভিযানের অঙ্গ হিসেবে গ্রামবাসীরা একসঙ্গে মদ ছাড়ার শপথও নিয়েছেন, যা সম্মিলিত সামাজিক পদক্ষেপের এক বিরল নজির।


দুই পঞ্চায়েতেরই বক্তব্য, এই পদক্ষেপগুলি একটি স্বাস্থ্যকর ও শৃঙ্খলাপরায়ণ সমাজ গড়ে তোলার বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ। তার জন্য আইনভঙ্গকারীদের পকেটে টান পড়লেও প্রশাসন পিছু হটবে না।



 

বেতন ও গ্রেড নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বড় সুখবর


সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুখবর দিয়েছে মন্ত্রণালয়। শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপ বাড়িয়ে ১১তম গ্রেড করার প্রস্তাব দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এছাড়া সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে বিভাগীয় উপপরিচালক পর্যন্ত সব কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সহকারী শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কেননা বর্তমানে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও দশম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। তদারকি কর্মকর্তা এবং প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড একই হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতাও তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে ১৩তম গ্রেড পাচ্ছেন সহকারী শিক্ষকরা। এতে করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের তিন গ্রেডের ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এতে টাকার অঙ্কে ইনক্রিমেন্টসহ প্রায় ১৫ হাজার ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এ অসন্তোষ দূর করতে সরকার বেতন গ্রেড উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও বিষয়টিতে সম্মতি দিয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, সহকারী শিক্ষকদের পদনাম পরিবর্তন করে ‘শিক্ষক’ করা হয়েছে। তাদের বেতন স্কেল ১১ গ্রেডে উন্নীত করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউপিইও), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের (ডিডি) স্কেল এক ধাপ উন্নীত করতে প্রস্তাব দেওয়া হবে।

তিনি জানান, অর্থ উপদেষ্টা, অর্থ সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বেতন বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরা হলে তাতে অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিবাচক সায় দিয়েছে। নতুন পে-কমিশনের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।

নতুন প্রস্তাবে বেতন কাঠামো

সরকারের কাছে পাঠানো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন প্রস্তাবে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে যে ১৩তম গ্রেডে (১১ হাজার টাকা স্কেল) বেতন পান, তা উন্নীত করে ১১তম গ্রেডে (১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেল) নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ৬৬ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।

সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ইউএপিইও) জন্য বর্তমান ১০ম গ্রেড (১৬ হাজার টাকা স্কেল) থেকে উন্নীত করে ৯ম গ্রেডে (২২ হাজার টাকা স্কেল) বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পদে সারাদেশে ২,৬০৭ জন কর্মকর্তা কর্মরত।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ইউপিইও) ক্ষেত্রেও বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে। তারা এখন ৯ম গ্রেডে (২২ হাজার টাকা স্কেল) বেতন পাচ্ছেন, প্রস্তাব অনুযায়ী এটি উন্নীত হয়ে হবে ৮ম গ্রেড (২৩ হাজার টাকা স্কেল)। বর্তমানে এই পদে রয়েছেন ৫১৬ জন কর্মকর্তা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ডিপিইও) বেতনও বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের বেতন ৭ম গ্রেড (২৯ হাজার টাকা স্কেল) থেকে উন্নীত করে ৬ষ্ঠ গ্রেডে (৩৫ হাজার ৫০০ টাকা স্কেল) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ পদে কর্মরত আছেন ৬৮ জন।

এছাড়া, বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের বেতন ৫ম গ্রেড (৪৩ হাজার টাকা স্কেল) থেকে বাড়িয়ে ৪র্থ গ্রেড (৫০ হাজার টাকা স্কেল) করার সুপারিশ করা হবে বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর।
Categories: