নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কে এখনো ধরা পড়ে ৫০ বছরের পুরোনো মহাকাশযানের সংকেত
নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কে এখনো ধরা পড়ে ৫০ বছরের পুরোনো মহাকাশযানের সংকেত
১৯৭৭ সালের কথা। তখন পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল দুইটি মহাকাশযান — Voyager 1 ও Voyager 2। এই মহাকাশযানগুলোর উদ্দেশ্য ছিল সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোর তথ্য সংগ্রহ এবং মানব সভ্যতার একটি ক্ষুদ্র বার্তা বহন করে মহাবিশ্বে প্রেরণ। তখন হয়তো কল্পনাও করা যায়নি যে এই মহাকাশযানগুলো ৫০ বছর পরেও পৃথিবীতে সংকেত পাঠাবে — এবং সেই সংকেতগুলো এখনো ধরা পড়ে নাসার এক বিশেষ নেটওয়ার্কে, যার নাম Deep Space Network (DSN)।
নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক কী?
DSN-এর কাজ হচ্ছে:
-
দূরবর্তী মহাকাশযান থেকে সংকেত গ্রহণ করা
-
পৃথিবী থেকে কমান্ড পাঠানো
-
ছবি ও ডেটা ডাউনলোড করা
এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আন্তর্মহাকাশ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক হিসেবে পরিচিত।
ভয়েজার: মহাকাশে মানব সভ্যতার দূত
Voyager 1 ও 2 ছিল মানবজাতির প্রথম কিছু মিশনের অংশ, যারা বৃহস্পতির চাঁদ, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের কাছে গিয়ে সরাসরি ছবি ও ডেটা পাঠিয়েছিল। এই মিশনগুলো এতটাই সফল হয়েছিল যে, মূল মিশন শেষ হওয়ার পরেও তাদের যাত্রা বন্ধ হয়নি।
বর্তমানে, Voyager 1 মানব ইতিহাসে সবচেয়ে দূরবর্তী মহাকাশযান, যেটি এখন ২১ বিলিয়ন কিলোমিটার (১৩ বিলিয়নের বেশি মাইল) দূরে অবস্থান করছে। Voyager 2-ও এর থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই।
এই বিশাল দূরত্ব থেকেও এরা এখনো পৃথিবীতে সংকেত পাঠাতে সক্ষম — এবং সেই সংকেত ধরেই কাজ করছে ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক।
কীভাবে এই সংকেত কাজ করে?
Voyager মহাকাশযানগুলোতে রয়েছে 70s-এর দশকের প্রযুক্তি, যেখানে কম্পিউটার মেমোরি মাত্র ৬৪ কিলোবাইট এবং সংকেত পাঠানো হয় ২৩ ওয়াটের রেডিও ট্রান্সমিটারে — যা একটি স্ট্যান্ডার্ড বাল্বের শক্তির চেয়েও কম।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় — Voyager 1 থেকে যে সংকেত আসে তা ২০ ঘণ্টা সময় নেয় পৃথিবীতে পৌঁছাতে। আর সেই সংকেত এতটাই দুর্বল যে তা একটি ঘড়ির টিকটিকির চেয়েও কম শক্তির।
কেন এখনো চলছে এই যোগাযোগ?
-
সৌরজগতের সীমানার বাইরের পারিপার্শ্বিকতা বোঝা
-
আন্তঃনাক্ষত্রিক কণাগুলোর গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করা
-
মহাজাগতিক বিকিরণ ও প্লাজমা পর্যবেক্ষণ করা
এইসব তথ্য মানবজাতিকে ভবিষ্যতের আন্তরীক্ষ অভিযান পরিচালনায় সাহায্য করবে।
Post a Comment