৮ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে সনাতন সমাবেশ

 

৮ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে সনাতন সমাবেশ

বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আমরা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন চেয়েছি, সংখ্যালঘু কমিশন চেয়েছি, মন্ত্রণালয় চেয়েছি। বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে-এতে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধন করা হলে তা আমরা মানব না। বৈষম্যমূলক নিপীড়ন মেনে নেব না।
আমরা অনেক উপেক্ষিত হয়েছি, বঞ্চিত হয়েছি। আর না।’
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের হিন্দুদের মঠ-মন্দিরে ‘হামলা বাড়িঘরে লুট, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার অপরাধে চাকরি থেকে অব্যাহতিসহ হিন্দু নির্যাতনের’ প্রতিবাদে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সনাতনীদের উৎখাতের চেষ্টা করবেন না হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা উড়ে আসিনি। আমরা উপনেবেশিক নই। এ দেশ থেকে আমাদের উৎখাত করার চিন্তা করবেন না। কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন তাহলে এই ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে।
সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হচ্ছে বারবার, এ দেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। কারণ সহনশীলতা লুপ্ত হচ্ছে। সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল এখন আমার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এসব কাজ বাংলাদেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী। আমরা আর নীরব থাকব না, মাঠে নেমেছি। কেউ যদি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনায় জড়িত থাকে তাদের আসামি করুন, বিরোধিতা করব না। কিন্তু বেছে বেছে মামলায় আসামি করা হচ্ছে, এসব বন্ধ না করলে সহনশীলতা নষ্ট হবে। সনাতনীদের বাদ দিয়ে কোনো রাষ্ট্র পরিচালনার প্রচেষ্টা কখনো করবেন না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ৪টি মূলনীতিতে। আমাদের দলীয় পরিচয়ে নমিনেশন দেওয়া হয়। হিন্দুদের অস্তিত্বের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা গণতন্ত্রের নামে প্রহসনকে মেনে নেব না।
এর আগে সমাবেশস্থল পেরিয়ে নগরের কোতোয়ালী থেকে আন্দরকিল্লা, জেলা পরিষদ চত্বর থেকে সিনেমা প্যালেস, জেল সড়কসহ আশপাশের সড়ক-উপসড়কেও মানুষের ভিড়। চট্টগ্রামসহ আশপাশের উপজেলা ও জেলা থেকে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। বিকেলে লালদীঘি মাঠের আশপাশে সড়কগুলোতে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভিড় সামলাতে এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি ছিল। 
ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ৬ দফা দাবি হয়েছিল সে মাঠে বাংলাদেশে সব মঠ মিশনের সাধুরা সমবেত হয়েছে সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতই নিপীড়ন হবে আমরা তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। আমাদের এই ঐক্যকে কোন ভাবেই বিভক্ত করতে পারবেন না। এই ঐক্য বাংলার। এটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বির্নিমাণের ঐক্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে যত গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে , যারা আত্ম বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের স্মরণে এই ঐক্য। আজ শুক্রবার সকালে প্রর্বতক মন্দিরে সব সাধুরা বৈঠক করেছি। একটি সমন্বয়ক পরিষদ গঠন হয়েছে। এতদিন আমাদের অভিভাবক ছিল না। এখন ৫ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ হয়েছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। সনাতনীরা সর্বদা সাহসী। যারা ভিতু তারা এই বঙ্গের পুত্র হতে পারে না। এ বঙ্গের উত্তরাধিকার আমরা।
তিনি আরো বলেন, এ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। এ আন্দোলনকে হারিয়ে যেতে দিব না। রংপুরে, খুলনাসহ প্রতিটি বিভাগে আমরা মহাসমাবেশ করব। প্রতিটি জেলায় সমাবেশ, প্রতিটি উপজেলায় সমাবেশ হবে। সুশৃঙ্খল আন্দোলন এটি, এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন না। সারা দেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার পর আমরা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করব। 
মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিন্দু হয়েছে। আর এদেশে একজনকে করে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন। জেএমসেন হলের মামলায় আসামিদের জামিন হয়ে গেল। অথচ আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানলে জামিন পায়। আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে।
সমাবেশে কৈবল্যধাম আশ্রমের মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্য্য বলেন, সনাতনী সমাবেশ যাতে উজ্জীবিত হয় এজন্য ঐক্যবদ্ধ হন। সনাতনী সম্প্রদায়ের আবেদন ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। মৃত্যু হবেই, ভয় নেই। মৃত্যুকে ভয় করলেই চলবে না, এ মাতৃভূমিতে আমরা উড়ে এসে বসিনি।
গোপীনাথ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, যে নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হল সেখানে প্রশাসনের ব্যবস্থা থাকার পরও কেন ষষ্ঠী পূজার দিন প্রতিমা ভাঙা হল? বিসর্জনে কেন ঢিল ছোঁড়া হল। এসবের জবাব দিতে হবে। সনাতনীরা বাঙলাতে জন্মেছে, এখান থেকে বিতাড়িত করার দুঃসাহস কারও নেই। সনাতনী ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি বিদ্রুপ আলোচনা করে তাহলে কোনো সনাতনী বসে থাকবে না। 
শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ তপনানন্দ গিরি মহারাজের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন পটিয়া পাচোরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ প্রমুখ। 



Categories: