পায়রা বন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে রিমাল, ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

ঘূর্ণিঝড় রেমাল ধেয়ে আসার খবরে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে রোববার চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের জেটিগুলো জাহাজশূন্য করার পাশাপাশি জাহাজে পণ্য উঠা-নামাসহ সব ধরনের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়েছে। জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা এলার্ট-ফোর। বন্দরের জেটি থেকে ১৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ এবং বহির্নোঙ্গর হতে ৪৯টি মাদার ভেসেল গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে কয়েকশ’ লাইটার জাহাজসহ ফিশিং ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলো। পাশাপাশি বিমান উঠা-নামা (ফ্লাইট অপারেশন) বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। সিডিউল বাতিল হয়েছে ১৩টি আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বেলা ১টা নাগাদ জেটি ও বহির্নোঙ্গর হতে সকল বাণিজ্যিক জাহাজ গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া আভ্যন্তরীন নৌযানগুলোকে (লাইটার জাহাজ) কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট হতে শাহ আমানত সেতুর উজানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ছিল উত্তাল। মাঝারি আকারের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল বিস্তীর্ণ উপকূল জুড়ে। সাথে বাতাসের তীব্রতাও বাড়ছিল। সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব দেখা না গেলেও দুপুরের পর আবহাওয়া কিছুটা গুমোট হয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরাতে থাকে।


৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারির পর চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা, কাট্টলী, আকমল আলী সড়ক ও হালিশহরের জেলেপল্লিসহ উপকুলবর্তী উপজেলাগুলোকে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চবক-এর সাইক্লোন ডিজেস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড পোস্ট সাইক্লোন রিহেবিলিটেশন প্ল্যান-১৯৯২ অনুযায়ী আবহাওয়া অধিদফতর ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত জারি করলে প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা অ্যালার্ট-১ জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদফতর ৪ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত জারি করলে বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। বিপদ সঙ্কেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়। বিপদ সঙ্কেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা বা অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে আঘাত হানার আগে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারির পর চবক এর সাইক্লোন ডিজেস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড পোস্ট সাইক্লোন রিহেবিলিটেশন প্ল্যান-১৯৯২ অনুযায়ী চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে চার মাত্রার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে কর্তৃপক্ষ। বন্দরের নিজস্ব এই সতর্কতা জারির পর চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি থেকে ১৩টি জাহাজ সকালের জোয়ারে বহির্নোঙ্গরে গভীর সাগরের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেটিতে থাকা বাকি জাহাজগুলোকেও সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল। এছাড়া বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে কক্সবাজারের উপকূলীয় সাগরের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে। সকল সমুদ্রগামী জাহাজের ডাবল ইঞ্জিন চালুর নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।


বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বন্দরে জাহাজে পন্য-উঠানামা বন্ধ করা হয়েছে। জেটি থেকে সবগুলো জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে পাঠানো হয়েছে। ইকুইপমেন্টগুলো লক করে রাখা হচ্ছে। ঝড়ে দুর্ঘটনা এড়াতেই জাহাজগুলোকে জেটি থেকে সরিয়ে দেয়া হয় বলে তিনি জানান।
পাশাপাশি জরুরী নৌ দুর্ঘটনা মোকাবেলায় শক্তিশালী টাগ ও স্যালভেজ ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্দর নৌ বিভাগের সকল জাহাজ ১০০ শতাংশ জনবলসহ যেকোনো শিপিং সার্ভিসের জন্য নিরাপদ অবস্থানে সচল রাখা হয়েছে। বন্দরে পণ্য ডেলিভারি বন্ধ রয়েছে বলেও তিনি জানান।




Categories:

 

উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত


বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত করেছে। আজ রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ–পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আরও উত্তর দিকে সরে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান আজ রাত সোয়া আটটার দিকে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

শামীম আহসান জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের প্রতিটি জেলায় ঝোড়ো হাওয়াসহ ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর অগ্রভাগ আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকেই খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়।

দুই বন্দর ও ৯ জেলায় ১০ নম্বর বিপৎসংকেত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হয়। আজ সকালেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। সকালেই পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং এসব জেলার কাছের দ্বীপ ও চরগুলোও ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় রয়েছে।

এর পাশাপাশি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোও এই মহাবিপৎসংকেতের আওতায় রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছিল, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির সময় উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে

Categories:

 

গরমে করলা কেন খাবেন? 

দেশব্যাপী তাপপ্রবাহ বইছে। গরমে ঘর থেকে বের হওয়াই দায়। ঘরে ঘরে অসুস্থতা। অনেকেই পেটের পীড়ায় ভুগছেন। 

এই সময় সুস্থ থাকতে খাদ্যাভ্যাসে নজর দেওয়া খুবই প্রয়োজন৷ এই সময় যতটা সম্ভব হালকা খাওয়া-দাওয়া করা উচিত ৷ 

এই গরমে উচ্ছে বা করলা আপনার শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য় করতে পারে ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমে করলা খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন-

পুষ্টিগুণে ভরপুর: স্বাদে তেতো হলেও উচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি । এটি ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, চর্বি, ফাইবার এবং আয়রন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উপাদান।

পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো: উচ্ছে হজম সহায়ক একটি সবজি । পেট ভার, গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করতে এই সবজির তুলনা নেই।

শরীর হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে: গরমে শরীর হাইড্রেট রাখা জরুরি। সেক্ষেত্রে উচ্ছে খুব কার্যকরী। কারণ এতে পানির পরিমাণ বেশি । বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমে এই সবজি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় । এটি সারা দিন শরীরকে হাইড্রেট ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য় করে । শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে এই সবজি। সর্বোপরি, নিয়মতি এই সবজি খেলে শরীর সুস্থ থাকে। 

২০১৩ সালে 'নিউট্রিশন রিভিউ' জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, উচ্ছেতে প্রায় ৯৬ শতাংশ পানি রয়েছে । এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মের এই সবজি খেলে শরীর ঠান্ডা এবং হাইড্রেট থাকে । এই গবেষণায় অংশ নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পুষ্টিবিদ ডঃ জেএম ডিমনের মতে, গ্রীষ্মকালে শরীরকে হাইড্রেট রাখতে উচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ৷

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: উচ্ছেতে থাকা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে ।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: গরমে খাদ্যতালিকায় উচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে । কারণ, এতে ক্যালরি কম এবং ফাইবার বেশি । বিশেষ করে, উচ্ছেতে থাকা ফাইবার অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা কমায় ।


Categories: